Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি - একটা অপরিণত বিপ্লবের মৃত্যু - ডাঃ রায়হানুর ফেরদৌস

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি - একটা অপরিণত বিপ্লবের মৃত্যু

ডাঃ রায়হানুর ফেরদৌস



পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি



সবকিছুর মতো বিপ্লব বা যুদ্ধেরও একটা সময় আছে সেটা পরিণত হওয়ার । কোন বিপ্লব বা স্বাধীনতা যুদ্ধ যদি পরিণত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় তবে সেটা কোন ভালো ফলাফল বয়ে আনে না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন দাবিতে করা বিপ্লব সবগুলোই ছিলো অপরিণত যুদ্ধ বা বিপ্লব ।



স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস যারা লেখেন তারা নয় মাসকে অনেক লম্বা, অনেক রক্তক্ষয়ী হিসাবে দেখান । কিন্তু তারা এটা বলেন না যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধু যুদ্ধের ফলে লাভ হয়নি, বরং হয়েছিলো জিও পলিটিক্যাল সমঝোতার ফলে । পৃথিবীর কোন দেশই এত স্বল্প সময়ে স্বাধীন হয়নি । দ্রুত স্বাধীন হওয়ার ফলে বাংলেদেশের মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে তেমন কোন শক্তিশালী ধারণা যেমন গড়ে উঠতে পারেনি, তেমনি যুদ্ধকালীন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সক্ষম একটা প্রজন্মও গড়ে ওঠেনি । স্বাধীনতার ফলে তাই বাংলাদেশের প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে তারাই বহাল ছিলো যারা নয়মাস আগেও পাকিস্তান সরকারের চাকরি এবং তাঁবেদারি করতো । এদের বহাল না রেখে উপায়ও ছিলো না ।


নতুন একদল স্বাধীনতার চেতনাধারী প্রশাসন তৈরি করার সময়ই তো বাংলঅদেশ পায়নি । ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পরে তাই বাংলাদেশ ছিলো এমন একটা রাষ্ট্র যার সবকিছুই আগের শুধু স্বাধীনতাটা নতুন । এবং যার বিপুল একটা অংশ যুদ্ধ নিয়ে সচেতন নয় ও তখনো পাকিস্তানকে ভালবাসে । এই অপরিণত যুদ্ধের ফলাফল কি? আজ পঞ্চাশ বছর পরে এসে আমাদের সন্ধান করতে হচ্ছে সমৃদ্ধি, লড়তে হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে, তর্ক করতে হচ্ছে প্রকৃত স্বাধীনতার ইতিহাসের সত্য মিথ্যা নিয়ে ।



পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিও তাই!!

যখন কোন ভূখন্ড নিয়ে লড়াই চলে তখন বিপ্লবী শক্তির হার জিত নির্ভর হয় কতটা ভূখন্ড তার কবজার আছে তার উপর । চুক্তির দরকষাকষিতে সে কতটা লাভবান হবে সেটা এই ভূখন্ডের পরিমাণের উপর নির্ভর করে । কারণে এখানে দুপক্ষেরই লাভ লোকসানের বিষয় আছে । রাষ্ট্র বা নিপীড়ক গোষ্ঠী চেষ্টা করবে সর্বনিম্ন ছাড়ে চুক্তি করার, আর বিপ্লবী গোষ্ঠী চেষ্টা করবে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করার ।



পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি  অবশ্যই শেখ হাসিনা বা তার সরকারের মুকুটে একটা পালক । অন্যরা যা পারেনি বা আন্তরিক হয়নি সেখানে তিনি তার প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন । কিন্তু পাহাড়ীদের জন্য এই চুক্তি হয়েছিলো বড় অসময়ে। তাদের আন্দোলন তখনো ছিলো বিচ্ছিন্ন এবং সহিংস । অপামর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভিতরে এই আন্দোলন বা সংগ্রামের আদর্শ কিংবা তাড়নার কোনটাই সেভাবে ছড়িয়ে পড়েনি । একটা সার্বিক আন্দোলন হওয়ার আগেই একটা অসম্পূর্ণ ও একপাক্ষিক চুক্তি হয়ে গেছিলো ।



ফলাফল !


যে সরকারের সাথে চুক্তি হয়েছিলো তারাই চুক্তির পঁচিশ বছর সময়ের ভিতর বিশ বছরই ক্ষমতায় ছিলো এবং আছে । চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা পাহাড়িরা এখন চুক্তির আগের চাইতে কোনঠাসা অবস্থায় আছে । যেগুলোর বাস্তবায়ন রাষ্ট্রকে অধিক সুবিধা দিবে শুধু সেগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চুক্তির বাকিসব বাদ, প্রথম শর্তটাই পালন হয়নি ।



ফলে পাহাড় এখন কি অবস্থায় আছে?

স্বাধিকার আন্দোলনের চিন্তার জায়গা থেকে একদল আছে চাঁদাবাজিতে, একদল আছে অন্য দলের মানুষকে মেরে চাঁদাবাজির এলাকার পরিমাণ বাড়াতে, একদল ভাবছে আমরা ধনী হয়েছি বেঁচে গেছি, একদল ভাবছে পযটন বাড়লে তাদের আয় বাড়বে, একদল ভাবছে পাহাড় হলো লুকিয়ে রাখার জিনিস, একদল ভাবছে ভিন জাতিতে বিয়ে আটকালেই পাহাড়ের সব সমস্যার সমাধান হবে ইত্যাদি ।



প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আসলেই কি দরকার সেটা নিয়ে কেউ ভাবছে না । পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি উদযাপনের জন্য আয়োজিত কনসার্ট, আনন্দ মিছিল সেটারই একটা সাইনবোর্ড ।



পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির হাওয়াই মিঠাইয়ে ভেসে গেছে তাই পাহাড়ের মুক্তি - যেমন ভেসেছিলো কাপ্তাই ।



মেডিকেল অফিসার, রেডিমি হসপিটাল, মিরপুর, ঢাকা




তথ্য সংগ্রহঃ উন্মেষ ৮ম সংখ্যা, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ