ক্রিস্টমাস: এক মহান উৎসব

এক মহান উৎসব

ক্রিস্টমাস, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর একটি, যা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে উদযাপিত হয়। প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী এই দিনটি অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয়। যদিও এটি মূলত খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব, তবে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপিত হয়।

ক্রিস্টমাসের উৎপত্তি মূলত যিশু খ্রিষ্টের জন্মকে কেন্দ্র করে। খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে বলা হয়েছে, যিশু খ্রিষ্ট ভ্রষ্ট মানবতাকে রক্ষা করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাঁর জন্মের দিনটিকে এক বিশেষ দিন হিসেবে মনে করা হয়, কারণ এটি নতুন আশার সূচনা ও মানবজাতির জন্য শাশ্বত প্রেমের বার্তা বহন করে। তবে, খ্রিষ্টান ধর্মের বাইরেও ক্রিস্টমাসকে আনন্দ, শান্তি এবং ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষের জন্য এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

ক্রিস্টমাসের ঐতিহ্য অনেক পুরনো এবং এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জাতির মধ্যে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্রিস্টমাসের সময় ঘরগুলোকে আলোকিত করা হয়, বড় বড় ক্রিস্টমাস গাছ সাজানো হয় এবং সেখান থেকে উপহার বিতরণ করা হয়। পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে খাবার খায় এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। ‘সান্তা ক্লজ’, যিনি সাদা দাড়ি এবং লাল পোশাক পরিধান করেন, ক্রিস্টমাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সান্তা ক্লজের আগমনের সাথে সম্পর্কিত গল্প ও বিশ্বাসগুলো শিশুদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়।

এছাড়া, ক্রিস্টমাসের আগের রাতে বা ২৪ ডিসেম্বর "ক্রিস্টমাস ইভ" হিসেবে উদযাপন করা হয়, যা আরো বেশি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এই দিনটি বিশেষভাবে পরিবারের সঙ্গে কাটানো, উপহার বিনিময় এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। সারা বিশ্বে ক্রিস্টমাসের সময় বিশেষ ধর্মীয় প্রার্থনা, গীর্জায় উপস্থিতি এবং খ্রিষ্টান ধর্মীয় গান গাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও ক্রিস্টমাস উদযাপনের একটি সঠিক ঐতিহ্য রয়েছে, যদিও এটি একটি ধর্মীয় উৎসব, তবে ধর্মীয় বৈষম্য না করে এই দিনটি বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। ক্রিস্টমাসের সময় বড় বড় শপিং মলগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং অফার দেওয়া হয়, যেখানে সবাই উপহার কিনতে যান। শহরের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় আলোকসজ্জা, গাছ এবং সান্তা ক্লজের ভাস্কর্য দেখা যায়, যা উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ক্রিস্টমাস শুধু ধর্মীয় উপলক্ষে উদযাপন করা হয় না, বরং এটি একটি মানবিক অনুভূতির প্রতীকও। এই দিনটির মাধ্যমে মানুষ একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির বার্তা প্রদান করে। সব মিলিয়ে, ক্রিস্টমাস শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি পৃথিবীজুড়ে এক ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার উৎসব, যেখানে সবাই একত্রিত হয়ে শান্তি, ভালোবাসা ও আনন্দ উদযাপন করে।

শেষ পর্যন্ত, ক্রিস্টমাস একটি সুযোগ প্রদান করে সকল মানুষকে একত্রিত হওয়ার এবং মানবিক গুণাবলীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার। এটি প্রমাণ করে যে, পৃথিবী একটি বৃহৎ পরিবার, যেখানে সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে এবং ভালোবাসতে পারে।

• বাংলা কবিতা
• চাকমা কবিতা
• মারমা কবিতা
• ত্রিপুরা কবিতা
• প্রেমের কবিতা
• বিদ্রোহী কবিতা
• প্রকৃতির কবিতা
• ছড়া
• PDF